বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে বারবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও দুর্দশাগ্রস্ত ঝুলন্ত ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইট টিভির সংযোগ ক্যাবল মাটির নিচে দিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি হয়নি। যদিও বিদ্যুৎ ইউটিলিটিগুলো এ বিষয়ে তাদের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
এমনকি ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইট টিভি ক্যাবলের অপারেটরদের বিদ্যুৎ ইউটিলিটি বিভাগগুলোর চলমান ভূগর্ভস্থ ক্যাবলিং প্রকল্পে যুক্ত করানোও সম্ভব হয়নি।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) তথ্য মতে, তাদের সব ঝুলন্ত সঞ্চালন লাইন মাটির নিচ দিয়ে নিতে ধানমন্ডি এলাকায় প্রথম প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
আরও পড়ুন: অস্বাভাবিক বেশি দাম, ক্রেতা নেই কেরাণীগঞ্জের পাইকারি কাপড় বাজারে
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ইউএনবি বলেন, ‘ডিপিডিসির পক্ষ থেকে বারবার আহ্বান জানানো সত্ত্বেও কোনো ইন্টারনেট বা টিভি কেবল অপারেটর প্রকল্পে যোগ দিতে রাজি হয়নি। এমনকি এই প্রকল্পে যোগ দেওয়ার জন্য তাদের বিনামূল্যে অফারও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।’
এমন হতাশাজনক পরিস্থিতিতে সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগ তাদের আগের কমিটি পুনর্গঠন করে এবং সমাধানের জন্য একটি সভাও আহ্বান করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অজ্ঞাত কারণে বৈঠক হয়নি।
পুনর্গঠিত কমিটির সদস্য সচিব ও পাওয়ার সেলের পরিচালক মো. সেলিম উল্লাহ খান জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
ইউএনবিকে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বিভাগ ও সংস্থাগুলো এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করতে আগ্রহী নয়।’
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র ঝুলন্ত ক্যাবলের ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের (আইএসপি) দায়ী করেছে।
কয়েক দফা বৈঠকের পর বিদ্যুৎ বিভাগের বিগত কমিটি তাদের সহযোগিতা ছাড়া সমস্যার সমাধান করতে অসুবিধা বোধ করছে।
বিদ্যুৎ বিভাগে জমা দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেড (এসসিএল) ও ফাইবারঅ্যাটহোম (এফএএইচ) নগরীতে এনটিটিএন হিসেবে কাজ করছে এবং তারা নগরীতে তাদের প্রধান ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক পরিচালনার জন্য ভূগর্ভস্থ কেবল স্থাপন করেছে এবং প্রায় ১ হাজার ৭৩৪টি বৈধ এবং প্রায় ৫ হাজার অবৈধ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) প্রতিষ্ঠান স্থানীয় হিসেবে বাসাবাড়ি ও অফিসে ঝুলন্ত ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
নিয়ম অনুযায়ী, মূল নেটওয়ার্ক থেকে বাসাবাড়ি ও অফিসে ইন্টারনেট সেবা নিতে আইএসপিগুলো এসসিএল ও এফএএইচ থেকে সংযোগ নেওয়ার কথা। সম্প্রতি এনটিটিএনের আরেক প্রতিষ্ঠান বাহন লিমিটেডও এই নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলছে, কিন্তু এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিযোগ, আইএসপিগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে এনটিটিএন’র স্থাপিত লেবেল ডিস্ট্রিবিউশন প্রটোকল (এলডিপি) বা অ্যাকসেস পয়েন্ট (এপি) থেকে সংযোগ নিচ্ছে না।
আরও পড়ুন: স্টেকহোল্ডারদের সাড়া না পাওয়ায় সৌর সেচ কর্মসূচিতে ব্যর্থ সরকারের গ্রিড ইন্টিগ্রেশন নির্দেশিকা
অন্যদিকে প্রতিবেদনে বলা হয়, আইপিএস প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিযোগ, কোনো ইন্টারনেট সংযোগে কোনো সমস্যা দেখা দিলে এনটিটিএন কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ও তাৎক্ষণিক সমাধান না পাওয়ায় তারা এলডিপি বা এপি থেকে সংযোগ নিতে চায় না।
এছাড়া এনটিটিএনগুলো তাদের এলডিপি ও এপি থেকে আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত চার্জ আদায় করছে বলে আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এমতাবস্থায় আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো নিয়ম-নীতি অনুসরণ না করে নির্বিচারে সঞ্চালন ক্যাবল ঝুলিয়ে বাসাবাড়ি ও অফিসে সংযোগ দিচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এমতাবস্থায় কেবল বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনই (বিটিআরসি) হস্তক্ষেপ করে দ্বন্দ্ব নিরসন করতে পারে।
অবশেষে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ডিপিডিসি ও ডেসকোর সঙ্গে সমন্বয় করে সব ওভারহেড ক্যাবল ভূগর্ভস্থ করার জন্য ১১ দফা সুপারিশ করে কমিটি।
কমিটি দেখেছে, এলোমেলোভাবে ঝুলে থাকা ইন্টারনেট, নিরাপত্তা ও স্যাটেলাইট টিভির তার শুধু বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার জন্যই বড় হুমকি নয়, রাজধানীর সৌন্দর্যবর্ধনে সরকারের পদক্ষেপের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
বাহন লিমিটেডের কর্মকর্তা রাশেদ আমিন বিদ্যুৎ বলেন, তারা কারিগরি কারণে ডিপিডিসির আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবলিং প্রকল্পে যোগ দিচ্ছেন না, কারণ এটি আইএসপিএনের সঙ্গে সংযোগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সুবিধা দেবে না।
তিনি বলেন,‘তবে আমরা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিয়ে নিজস্ব ক্যাবল মাটির নিচে নিচ্ছি।’